দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়ানা এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে এক যাত্রী অবতরণের পূর্বেই বিমানের ইমারজেন্সি দরজা খুলে ফেলেছিলেন। স্থানীয় পুলিশ কর্তৃক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তারের পর এবার দরজা খোলার কারণ জানালেন ৩০ বছর বয়সী সে ব্যক্তি। খবর সিএনএনের।

পুলিশকে অভিযুক্ত ব্যক্তি জানান, চাকরি হারিয়ে তিনি সম্প্রতি বেশ মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। যাতায়াতের সময় বিমানে তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল এবং তাই তিনি দ্রুত বিমান থেকে বের হতে চাইছিলেন।

গত শুক্রবার (২৬ মে) দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ উপকূলের দ্বীপ শহর জেজু থেকে ‘এয়ারবাস ৩২১’ নামের বিমানটি দেগু শহরে যাচ্ছিল। দেগুর বিমানবন্দরে অবতরণের দুই থেকে তিন মিনিট পূর্বে ভূমি থেকে ৭০০ ফিট উচ্চতায় এ ঘটনাটি ঘটে।

এ ঘটনায় বিমানের মধ্যে থাকা অন্য যাত্রীরা বাতাসের প্রচণ্ড চাপে আতঙ্কিত হয়ে যান এবং অনেকেই শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতায় পড়েন। তবে এয়ারলাইনস কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিমানটি শেষে নিরাপদে অবতরণ করেতে পেরেছে।

অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মন্ত্রণালয় ও পুলিশ এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। ঘটনায় দেশটির বিমান চলাচল সম্পর্কিত বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কি-না সেটা যাচাই করে দেখা হবে।

মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি যদি ‘দ্য এভিয়েশন সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ এর লঙ্ঘন করেন তবে তাকে অভিযুক্ত করা হবে এবং প্রমাণ সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। অ্যাক্টের অপরাধের মধ্যে অনুমতি ছাড়া বিমানে দরজার ব্যবহার, প্রস্থান কিংবা যন্ত্রপাতির ব্যবহার অন্যতম।

এশিয়ানা এয়ারলাইনসের তথ্যমতে, বিমানটিতে মোট ২০০ জন মানুষ ছিল; যার মধ্যে ১৯৪ জন যাত্রী।

মাঝপথেই খুলে ফেললেন বিমানের দরজা! আটক অভিযুক্ত যাত্রী
দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় একইসাথে ঘটনাস্থলে একজন এভিয়েশন সেফটি সুপারভাইজার পাঠিয়েছে। যাতে করে বিমানটির রক্ষণাবেক্ষণে কোনো ত্রুটি ছিল কি-না সেটা খুঁজে বের করা যায়।

দেগু ফায়ার ডিপার্টমেন্টের তথ্যানুযায়ী, এ ঘটনায় হাইপারভেন্টিলেশনের কারণে বিমানের ১২ জন যাত্রী সামান্য আঘাত পেয়েছেন। এদের মধ্যে ৯ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এয়ারলাইন রেটিংসের এভিয়েশন এক্সপার্ট জোফরি থমাস ঘটনাটিকে ‘খুব উদ্ভট’ বলে ব্যাখ্যা করেন। এছাড়াও ফ্লাইট চলাকালীন টেকনিক্যালি বিমানের এ দরজা খুলে ফেলা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি।

জোফরি থমাস জানান, অবতরণের সময় এ৩২১ বিমানটির গতি থাকে ঘণ্টায় প্রায় ১৭২ মাইল। অর্থাৎ ঠিক এই গতির বাতাস বিমানটি ঘেঁষে যাচ্ছে। আর বিমানের পাখার পেছের থাকা দরজাটি এই পরিমাণ বাতাসের চাপের মাঝেও খুলে গিয়েছে!

থমাস বলেন, “দরজাটি যে এত গতির বাতাসের চাপ অতিক্রম করে খুলেছে, সেটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। তবে কোনো না কোনোভাবে ঘটনাটি ঘটেছে।”

অন্যদিকে এশিয়ানা এয়ারলাইনস সিএনএনকে জানায়, “বিমানটি উচ্চতা অনুসারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেবিনের চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন বিমানটি বেশি উচ্চতায় থাকে তখন দরজাটি খোলা সম্ভব নয়। তবে যখন উচ্চতা কম হয় এবং অবতরণের খুব কাছাকাছি থাকে, তখন দরজাটির খুলে ফেলা যায়।”