ঋতুচক্রে এখন হেমন্ত কাল। কিন্তু উত্তরের হেমন্ত মূলত শীতেরই আগমনী বার্তা দেয়। ঘাসে ঘাসে শিশির বিন্দু কণা। সকালে এখন শীতের আবেশ। সেই আবেশ ছড়িয়ে পড়েছে গন্ধবপুর নওগাঁও গ্রামসহ পুরো পাঁচটি এলাকায়। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে শীতের। শীত মানেই বড়ি দিয়ে আলু ফুলকপির ঝোল, শিম, বেগুন, পাঁচ মিশালি চচ্চড়ি, কচুশাক বা কৈ-শোল মাছের ঝোল রান্না করা।

আর গরম ভাতে ঘি, কালোজিরে বা পোস্ত দেয়া ছোট্ট ছোট্ট মাষকলাইয়ের ডালের বড়ি ভাজা হলে তো এক থালা ভাত নিমেষে শেষ! শীতের খাবারে ভিন্ন স্বাদ আনতে মাছ-সবজিতে বড়ির প্রচলন দীর্ঘদিনের। শীতের পিঠাপুলি খাবারের মতো বড়ির বেশ কদর রয়েছে। মুখরোচক সুস্বাদু এই খাদ্য অতি যত্নসহকারে শৈল্পিকভাবে তৈরি করে আসছে রূপগঞ্জের পাঁচটি গ্রামের প্রায় ৭০টি পরিবার। শীতের শুরু থেকে চার মাস এই বড়ি তৈরির কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন তারা।

কারিগররা বলেন, বাজারে ডালের দাম বৃদ্ধির কারণে এখন বিক্রি কম। তবু বসে নেই এই মাষকলাই-কুমড়ার বড়ি তৈরির কারিগররা। এই বড়ি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে দেশে-বিদেশে। কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আত্মীয়-স্বজনের হাত ঘুরে সুস্বাদু বড়ি এখন প্রবাসী বাঙালিদের রসনা তৃপ্ত করছে। এ উপজেলার মানুষ যারা দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন তাদের জন্য পাঠানো হচ্ছে এই বড়ি।

রূপগঞ্জের ৭০টি পরিবার মাসে প্রায় ৪২ হাজার কেজি ডালের বড়ি তৈরি করে আসছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮৪ লাখ টাকা।

এই বড়ি বানানোর কাজ শুরু হয় ভোর ৫টার দিকে। ভোরবেলায় তারাব পৌর এলাকার গন্ধবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে লোকজন পরিষ্কার করছেন টিন। পুরোনো সেই টিনের ওপর কেউবা দিচ্ছেন নারকেল তেলের প্রলেপ। কেউ ফেটিয়ে যাচ্ছেন মিহি করে বেটে নেয়া মাষকলাই। আবার কেউ তৈরি করছেন ডালের বড়ি। বাড়ির নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কিংবা শিশু সবাই কোনো না কোনোভাবে বড়ি বানানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন।

কারিগররা বলেন, শীতের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত বাজারে নানা ধরনের সবজির সমাহার দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল-নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। এই সময়ে মাছের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের সবজি বাজারে ওঠে। আর এই মাছ ও সবজি রান্নাতে ব্যবহার হয় সুস্বাদু ডালের বড়ি। সেই চাহিদা পূরণ করছে গন্ধবপুর নওগাঁও, গন্ধবপুর বারোবিঘা, নিমেরটেক, টান মুশরী গ্রামের মাষকলাই ও কুমড়ার বড়ি তৈরির কারিগররা।

পরিবারের কাজের ফাঁকে কুমড়ার বড়ি তৈরি করে বাড়তি উপার্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন গ্রামের নারী ও পুরুষরা। বাজারে চাহিদা আর স্বাদের ভিন্নতার জন্য চার ধরনের ডাল মসলা আর চালকুমড়া দিয়ে তৈরি হয় এই কুমড়ার বড়ি। বাজারে প্রচলিত অ্যাংকার, মটর, ছোলা ও মাষকলাইয়ের ডাল ব্যবহার করা হয় এই বড়ি তৈরিতে।

গন্ধবপুর নওগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি কুমড়ার বড়ি তৈরি করে শুকানোর জন্য রোদে দিয়েছেন। আর এ কাজে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও কাজ করছেন। ডালভেদে কুমড়ার বড়ি ১৮০ টাকা কেজি থেকে শুরু করে ২৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। ভোর থেকে উপকরণ তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে সূর্য ওঠা পর্যন্ত চলে এই কাজ। শীতের প্রখর রোদে দুই-তিন দিন শুকিয়ে বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত করা হয় কুমড়ার বড়ি। নগরপাড়া এলাকার গৃহবধূ রায়হানা সুলতানা বলেন, শীত এলে ঘরে ডালের বড়ি থাকা চাই। ডালের বড়ির সঙ্গে ফুলকপি আর কৈ মাছ দিয়ে সুস্বাদু তরকারি তৈরি করি।

কুমড়ার বড়ি তৈরির কারিগর সরাসরি রাণী দাস বলেন, নওগাঁও ও বারোবিঘা এলাকার প্রায় ৩০টি পরিবার কুমড়ার বড়ি তৈরির কাজ করে আসছেন। এ ছাড়া নিমেরটেক, টান মুশরী, কাঞ্চন এলাকার আরও ৪০টি পরিবার এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

নিমেরটেক এলাকার বড়ি তৈরির কারিগর মনিকা রানী দাস বলেন, ‘গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবারের নারীরা এই কাজ