সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমান প্রদেশে বসবাস করেন লাখো বাংলাদেশি। আরব আমিরাতের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় আজমানে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন কিছুটা সাশ্রয়ী। যে কারণে এই প্রদেশে বাংলাদেশি পরিবারের সংখ্যা আমিরাতের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় অনেক বেশি।

এ ছাড়া আজমানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াতে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন হাজারো বাঙালি। দীর্ঘদিন ধরে আজমান প্রদেশে বসবাসরত বাঙালিরা আজমানের ২ নম্বর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় গড়ে তুলেছে বাঙালি অধ্যুষিত একটি এলাকা। যেটা সকলের কাছে পরিচিত আজমানের বাঙালি মার্কেট নামে।

কেবল আজমান প্রদেশেই নয়, আরব আমিরাতের অন্যান্য প্রদেশে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলো এভাবে রূপ নিয়েছে বাংলাবাজার বা বাঙালি মার্কেটে। এসব বাংলাবাজার বা বাঙালি মার্কেট বাংলাদেশি প্রবাসীদের অন্যতম মিলনক্ষেত্র।

এসব এলাকায় গেলে মনে হয় যেন ভিনদেশে এক টুকরো বাংলাদেশ। এসব স্থানে গড়ে উঠেছে বাঙালিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসবাসের ক্ষেত্র। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের বাংলাদেশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এ ছাড়াও নানা নামে ও পরিচয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের শাখা-প্রশাখা বের করার প্রতিযোগিতা তো আছেই। সেসব স্থানে অনেকেই বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা, বিভিন্ন জেলা-উপজেলাভিত্তিক সংগঠনের মিলনমেলা, বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক সভা-সেমিনার করে যাচ্ছেন হরদম। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে বাঙালিদের বনভোজনের আয়োজনও চলে নিয়মিত।

আরব আমিরাতের অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবস্থান আজমানের বাঙালি অধ্যুষিত ২ নম্বর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায়। এখানে বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকাসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বসবাস। তবে বাঙালিদের আধিক্য থাকায় এই এলাকায় গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের হাটবাজারের ন্যায় একটি বাজার। মানুষের মুখে মুখে এই বাজারের নাম হয়ে গেছে ‘আজমান বাঙালি মার্কেট’।

এই মার্কেটে বাংলাদেশি দোকানের সংখ্যাই বেশি। এই এলাকায় বেশ কিছু গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরি থাকার কারণে আজমান বাঙালি মার্কেটে গার্মেন্টস সংক্রান্ত পণ্যে ও সরঞ্জাম বিক্রির দোকান রয়েছে অনেক। রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান। এ ছাড়া বড় শিল্প কারখানার পাশাপাশি আশপাশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট অনেক শিল্প কারখানা। সন্ধ্যা হলেই কর্মফেরত বাঙালিদের পদচারণায় মুখর হয় এই মার্কেট এরিয়া। বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোতে চলে রাতভর আড্ডা।

বাংলাদেশি সুপার মার্কেট, কাপড়ের দোকান, সেলুন, মোবাইল শপসহ বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী দোকান ছাড়াও এখানকার ফুটপাতে ভাসমান খাবারের দোকান, কাঁচাবাজারসহ নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান খুলে বসে বাঙালি প্রবাসীরা। নানা রকম বাহারি শাকসবজি, ফলমূল মেলে এইসব ভাসমান দোকানে। ঝালমুড়ি, চানাচুর, ভাপা পিঠাসহ হাতে তৈরি নানা দেশীয় খাবার পাওয়া যায় এখানে।

আজমান বাঙালি মার্কেটের নামকরণ সম্পর্কে জানতে কথা হয় মার্কেটের অনেক পুরোনো প্রতিষ্ঠান সামিয়া হোটেলের মালিক আব্বাস আলী খাঁনের সঙ্গে। তিনি জানান, বাংলাদেশিরা এই জায়গায় অনেক গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা গড়ে তুলেছে। গার্মেন্টস কারখানাকে কেন্দ্র করে এই এরিয়াতে সেলাই কাজের যাবতীয় জিনিসপত্রের দোকান খুলেছে বাংলাদেশি প্রবাসীরা। কালক্রমে বাংলাদেশিদের আনাগোনা বাড়তে বাড়তে এই এলাকা একসময় বাঙালি মার্কেট নামেই পরিচিতি লাভ করে।