ফরিদগঞ্জের রেমিট্যান্স যোদ্ধা ইসমাইল খান। তার মরদেহ পড়ে আছে দুবাই’র শারজায় কুয়েতি হাসপাতালের মর্গে। ২৮ দিন আগে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন তিনি। প্রায় ৯ মাস আগে দুবাই গেছেন। ১৯শে অক্টোবর স্থানীয় সময় সকালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তিনি।

স্ত্রী, সন্তান ও নিকটাত্মীয়গণ জানেন না কবে দেশে আসবে তার মরদেহ। শেষ বারের মতো তার মুখখানা দেখা ও দাফন-কাফন করার অপেক্ষায় আছেন নিকটাত্মীয় ও এলাকাবাসী। টাকার অভাবে আশা পূরণ হচ্ছে না। মৃত্যুর খবর শুনে কান্না করতে করতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে। এখন শুধুই অপেক্ষা।

সরজমিন জানা যায়, উপজেলার ফরিদগঞ্জ (দক্ষিণ) ইউনিয়নের হর্ণি দুর্গাপুর গ্রাম। সুফিয়ান বেপারী বাড়ির মৃত আবদুর রশিদের তৃতীয় সন্তান ইসমাইল খান সুমন (৩৫)। স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া (২৮), সাজেদ (৬) ও সেজাদ (৪) নামের দুই ছেলে সন্তান রয়েছে তার।

প্রায় ৯ মাস পূর্বে জীবিকার সন্ধানে আরব আমিরাতের শারজা গেছেন ইসমাইল। সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন। পথে তার হার্ট অ্যাটাক হয়। সেখানকার কুয়েতি হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মরদেহ রাখা হয়েছে ওই হাসপাতালের মর্গে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথা হয় স্ত্রী সুলাতানা রাজিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামীর সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় ১৮ই অক্টোবর রাতে। সেদিন ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্বামীর নিকট ফোন করেন তিনি। বিকালে জানতে পারেন ইসমাইল খান সুমন মারা গেছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন সবাই।

তারপর থেকে এখনো মরদেহ দেশে আসার অপেক্ষায় আছেন তারা। তিনি বলেন, কবে স্বামীর মরদেহ আসবে আমি জানি না। অপেক্ষার প্রহর গুনছি। তিনি জানান, বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার নামে ইসলামী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক থেকে টাকা লোন করেছি। সে টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি। বিদেশ যাওয়ার পর আরও সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লাখ টাকা দেনা রয়েছে।

পিতৃ মাতৃহীন সুমন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ। আর্থিক অনটনের কারণে কলেজে পড়ুয়া ছোটভাই প্রবাসে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অপর ভাইয়েরা পৃথক সংসার করছেন। ছোট ভাই রায়হান (২০) বলেন, ভাইয়ের মরদেহ কবে আসবে জানি না।

জানতে চাইলে বলেন, টাকার জন্য মরদেহ আনা যাচ্ছে না। কতো টাকা লাগবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রায় ৩ লাখ টাকা। ইসমাইল হোসেন সুমনের স্ত্রী, ভাই ও প্রতিবেশীরা বলেন, ইসমাইলের মরদেহ আনতে সরকার ও দেশ-বিদেশের সকলের সহযোগিতা চাই।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌলি মণ্ডল ও ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম বলেন, দুবাই’র শারজায় ইসমাইল হোসেন সুমনের মৃত্যু ও মরদেহ সম্পর্কে তাদের নিকট কোনো তথ্য নেই।