কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ওয়েবথ্রিতে কার্যক্রম পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে দুবাই। এ খাতের উন্নয়নে ও বিনিয়োগ বাড়াতে কোম্পানিগুলোকে বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনাল নিউজ।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টার এআই ও ওয়েবথ্রি ক্যাম্পাসের জন্য লাইসেন্স তৈরি করবে। লাইসেন্সের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দুবাই প্রশাসন ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি অঞ্চলটিকে ডিজিটাল সমাজে পরিণত করার জন্য সব ধরনের উদ্যোগে সহায়তা করবে।

বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউটেড লেডজার টেকনোলজি সার্ভিস, স্পেশালাইজড এআই রিসার্চ অ্যান্ড কনসালট্যান্সিস, আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিল্ডার, টেকনোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং পাবলিক নেটওয়ার্কিং সার্ভিস অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টার (ডিআইএফসি) ইনোভেশন হাবের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলব্লুশি বলেন, ‘নতুন লাইসেন্স বা অনুমোদন দেয়ার মাধ্যমে অঞ্চলটিতে আরো বিনিয়োগ ও দক্ষ কর্মী নিয়ে আসার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এছাড়া এর মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কাজ করার ও নতুন কিছু উদ্ভাবনের সংস্কৃতি তৈরি হবে।’

জুনে এ ক্যাম্পাস চালু হয়েছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এআই ও ওয়েবথ্রি কোম্পানিগুলোর একটি বড় গ্রুপ। ২০২৮ সালের মধ্যে এখানে ৫০০-এর বেশি হাইটেক কোম্পানিকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পাওয়ার সঙ্গে পাঁচ বছরে তিন হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আলব্লুশি বলেন, ‘দুবাইয়ের এআই ও ওয়েবথ্রি ক্যাম্পাসের জন্য এটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এর মাধ্যমে প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হিসেবে দুবাই বিশ্বে বড় জায়গা করে নেবে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দক্ষ কর্মীরা এখানে আসবে এবং অঞ্চলভেদে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।’

বিভিন্ন দেশ দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু এতদিন এটি নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে বর্তমানে ডিজিটাল অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

যে কারণে বিভিন্ন দেশ ও সরকার এআইয়ের ব্যবহার বাড়াতে সবাইকে উৎসাহ দিচ্ছে। এর মধ্যে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টস, অনলাইন শপিং, সার্চ ইঞ্জিন, ডাটা অ্যানালাইসিস, স্পিচ অ্যান্ড ফেস রিকগনিশন সিস্টেম, মেশিন ট্রান্সলেশন ও স্মার্ট হোম উল্লেখযোগ্য।

ম্যাকিনসে পরিচালিত এক জরিপের তথ্যানুযায়ী, ব্যবসা খাতের উৎপাদনশীলতায় জেনারেটিভ এআই অবদান রাখার মাধ্যমে প্রতি বছর ২ দশমিক ৬ থেকে ৪ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত করতে পারবে।

আরেক কনসালট্যান্সি সংস্থা পিডব্লিউসির পূর্বাভাস ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এআইয়ের অবদান ১৫ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হবে। ম্যাকিনসের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সাল নাগাদ এআই মধ্যপ্রাচ্যে দুই লাখের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।

ওয়েবথ্রি হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের নতুন ধারণা। এর প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্লকচেইন, বিকেন্দ্রীকরণ, উন্মুক্ততা ও বৃহৎ পরিসরে ব্যবহারকারীর উপযোগিতা। পিডব্লিউসির ইউনিট স্ট্র্যাটেজির তথ্যানুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে এ প্রযুক্তি জিসিসির (গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল) অর্থনীতিতে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার যুক্ত করবে। যার নেতৃত্বে থাকবে সৌদি আরব।

এআইয়ের বাজার বিকাশে দুবাই আরো কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জুনে দুবাই সেন্টার ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চালু করা হয়েছে। সেখানে ৩০টির বেশি সরকারি সংস্থার এক হাজারের বেশি কর্মীকে জেনারেটিভ এআই সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।