টিকেটের বাড়তি দামের কারণে আমিরাত প্রবাসীদের ঈদে ফেরার স্বপ্ন ভঙ্গ
“দিনে ১৫ বার টিকেট চেক করি; কিন্তু দুঃখের বিষয় টিকেটের বাড়তি দামের কারণে দেশে যেতে পারলাম না,” বললেন এক প্রবাসী।
কোরবানির ঈদে দেশে ফেরার জন্য সম্প্রতি ৩ হাজার ৮০০ দিরহামে বিমানের একটি টিকেট কাটেন আবুধাবি প্রবাসী সাংবাদিক সঞ্জিত শীল; ভাড়ার এই অংক সেখানকার একজন শ্রমিকের চার মাসের বেতনের সমান।
ঈদুল আজহার সময় টিকেটের এমন চড়া দামে আক্ষেপ প্রকাশ করে দুবাই প্রবাসী কিশোরগঞ্জের মাসুদুল ইসলাম বললেন, “দিনে ১৫ বার টিকেট চেক করি; কিন্তু দুঃখের বিষয় টিকেটের বাড়তি দামের কারণে দেশে যেতে পারলাম না।”
সংসারের চাকায় গতি আনতে বছরের পর বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাটানো বাংলাদেশিদের অনেকেই দেশে এসে পরিবারের সঙ্গে কোরবানির ঈদ করার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু টিকেটের চাহিদা আর দামের কারণে সেই স্বপ্ন তাদের অপূর্ণই থাকল।
তারা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদের আগে টিকেটের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। সেইসঙ্গে দামও বেড়েছে ‘পাঁচ-ছয় গুণ’। একবার বাড়ি যেতে চাইলে একজন শ্রমিককে তার টিকেটের জন্যই গুণতে হচ্ছে তিন-চার মাসের বেতনের সমান টাকা। ফলে ইচ্ছা থাকলেও উপায় মিলছে না।
আক্ষেপ করে আরেক প্রবাসী ওমর ফারুক উসমা বলেন, “টিকেটের দাম বেশি দেখে কোরবানির ঈদে বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন মাটি চাপা দিলাম।”
দুবাই প্রবাসী মঈন উদ্দিন সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৩ জুন ফ্লাই দুবাইয়ে দুবাই-চট্টগ্রাম ওয়ানওয়ে টিকেটের মূল্য ট্রাভেল অপারেটরের কমিশন ছাড়াই চাওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৭৭০ দিরহাম, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অথচ স্বাভাবিক সময়ে একই এয়ারলাইন্সে সেই ভাড়া সাত-আটশ দিরহাম। তার মানে ভাড়া বেড়েছে পাঁচ-ছয় গুণ, ভাবা যায়?”
দুবাইয়ের আরেক প্রবাসী কামরুল হাসান বলেন, “ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের ১৬ জুন এবং ১ জুলাই ফেরার ইকোনমি ক্লাসে শারজাহ-চট্টগ্রাম রিটার্ন ফ্লাইট টিকেটের দাম রাখা হয়েছে ৪ হাজার ১২৫ দিরহাম বা ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। টিকেটের এমন চড়া দাম বহন করা সাধারণ প্রবাসীদের পক্ষে সম্ভব না।”
উচ্চমূল্য হলেও ঈদে বাড়ির ফেরার আশায় বাধ্য হয়েই টিকেট নিয়েছেন দুবাই প্রবাসী চট্টগ্রামের মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন হিরন।
তার ভাষ্য, “৩ হাজার ৫০০ দিরহামে বিমানের টিকেট করে আসলাম উপায়ান্তর না দেখে।”
ওই চড়া দামে টিকেট কিনতে চাইলেও ঈদে বাড়তি চাহিদার কারণে তা পাচ্ছেন না অনেক প্রবাসী। এবারের মত সংকট আগে কখনো দেখেননি বলে জানালেন আবুধাবির ‘ক্যানক্যান ট্রাভেলসের’ ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানে আলম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ করে ইকোনমি ক্লাসের টিকেট মে মাসেই সব সোল্ড আউট হয়ে গেছে।”
তার ভাষ্য, “ক্রাইসিস মোকাবিলার জন্য আবুধাবি, দুবাই ও শারজাহ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আরও চার-পাঁচটা করে ফ্লাইট দিতে পারত। কিন্তু ঈদ ঘিরে ১০ জুন বিমান কেবল একটি ড্রিমলাইনার ফ্লাইট দিয়েছে।
“এখনো ফ্লাইট দিলে শুধু আবুধাবি থেকেই আড়াই থেকে ৩ হাজার মানুষ দেশে যাবেন। এ ক্ষেত্রে স্লট পাওয়ার একটা ইস্যু থাকে। কিন্তু অন্য এয়ারলাইন্স সেটা পেলে বিমান কেন পাবে না।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা চট্টগ্রাম সিলেট মিলে আবুধাবি থেকে সপ্তাহে সাতটি নিয়মিত ফ্লাইট রয়েছে। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা ১৬২ হলেও নিরাপত্তা ও অন্যান্য টেকনিক্যাল কারণে ১৩৬টির বেশি সিট বিক্রি করার সুযোগ থাকে না।
আবুধাবি ও আল আইনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ফেরদৌস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ২২টি স্টেশনে বিমানকে অপারেট করতে হয় ২১টি উড়োজাহাজের বহর দিয়ে; যার মধ্যে ড্রিমলাইনারও আছে। আমাদের আমাদের সীমাবদ্ধতাও আছে।”
বাড়তি চাহিদার পরও অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা না করার প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা বিমানের ম্যানেজমেন্ট ও ফ্লাইট অপারেশনসের এখতিয়ার।”
আবুধাবিতে ক্যানক্যান ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জানে আলম বলেন, “বিমান আবুধাবি থেকে তিনটি রুটে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট অপারেট করলেও সেগুলো ছোট এয়ারক্রাফট বোয়িং ৭৩৭ দিয়ে চালায়। এর ধারণক্ষমতা থাকে প্রায় দেড়শ। বিমান ঈদ মৌসুমে কেবল একটিই স্পেশাল ফ্লাইট দিয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
“এই সুযোগে এয়ার অ্যারাবিয়া, ইন্ডিগো, ইউএস বাংলা, শ্রীলঙ্কান এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ, ভিসতারা, গালফ এয়ার ভালোই ব্যবসা করে নিচ্ছে। অথচ প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবেগ ও পছন্দের শীর্ষে সবসময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। যাত্রীরা এখনও প্রতিনিয়ত এসে ধরনা দিচ্ছেন অন্তত বিমানের বিজনেস বা হায়ার ক্লাসে হলেও একটা সিট দেওয়ার জন্য। আমরা পারছি না, এটা আমাদের ব্যর্থতা।”
বাড়তি ভাড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুবাইয়ের আল সাবকা রোডে বাংলাদেশি ট্রাভেল এজেন্সি ‘আল হিকমা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম’ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনুদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, “বিদেশি উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করছে। বাংলাদেশ বিমানের তবুও ভাড়া বাড়ানোর একটা সীমারেখা আছে; কিন্তু বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়ায় কোনো লাগাম টানা হয় না।”