প্রবাসীদের জন্য দুবাই কনস্যুলেটের ‘আউটসোর্সিং সার্ভিস’, সুবিধার থেকে ‘ভোগান্তি বেশি’
পাসপোর্ট সেবা সহজ করতে কয়েক মাস আগে আলাদা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে ‘আউটসোর্সিং সেবা’ চালু করে দুবাই কনস্যুলেট; তবে এসব সেবা নিতে এসে বাড়তি সময় আর অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন প্রবাসীরা।
তারা বলছেন, আগে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যে সেবা পাওয়া যেত, তা সহজ করতে ‘আউটসোর্সিং সেবা’ চালু হলেও উল্টো ‘ভোগান্তিই’ হচ্ছে।
এমআরপি পাসপোর্টের জন্য সরকারি ফি এর বাইরে অতিরিক্ত ফি দিতে হচ্ছে। ডকুমেন্ট এটেস্টেশনের বা সত্যায়নের সরকারি ফি এর চেয়ে সার্ভিস ফিই দিতে হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। সময়ও লাগছে অনেক।
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর থেকে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও আবুধাবি দূতাবাস থেকে ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি পাসপোর্ট সেবা পেয়ে আসছেন প্রবাসীরা। দুবাই, শারজাহ, আজমান, উম্মা আল কুয়াইন, রাস আল খাইমাহ ও ফুজিরা প্রদেশে থাকা বাংলাদেশিরা দুবাই কনস্যুলেট থেকে সেবা নিয়ে আসছেন।
কিন্তু গত ২০ ডিসেম্বর দুবাইসহ অন্য পাঁচ প্রদেশের প্রবাসীদের পাসপোর্টে সেবা সহজ করতে এমআরপি পাসপোর্টের জন্য আলাদাভাবে ‘আউটসোর্সিং সেবা’ চালু করে দুবাই কনস্যুলেট। এজন্য দুবাইয়ের আল-কারামা উম্ম হুরায়রা-৩ রিম রেসিডেন্সি বিল্ডিংয়ে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ চালু হয়।
মালয়েশিয়ান কোম্পানি ‘ফশওয়া গ্লোবাল’ বাংলাদেশিদের জন্য ‘আউটসোর্সিং’ সেবার বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তির পর বাংলাদেশ কনস্যুলেটে এমআরপি পাসপোর্ট সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেবল ই-পাসপোর্ট, এনআইডি ও আউটপাসসহ কিছু সার্ভিস কনস্যুলেট থেকে দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য সার্ভিসের জন্য যেতে হচ্ছে ‘ফশওয়া গ্লোবাল’ আউটসোর্সিং সেন্টারে।
আবার ‘আউটসোর্সিং’ সার্ভিসের জন্য দুবাই কনস্যুলেট থেকে শাটল সার্ভিস চালু হওয়ার কথা থাকলেও পরে সেটি হয়ে ওঠেনি। ফলে বিভিন্ন প্রদেশের প্রবাসীরা কনস্যুলেটে যে সেবা পাচ্ছেন না, তার জন্য অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন ‘আউটসোর্সিং’ সেন্টারে।
‘ফশওয়া গ্লোবাল’ বর্তমানে এমআরপি পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন, ভিসা, প্রবাসী কল্যাণ কার্ড ও ডকুমেন্ট এটেস্টেশন সেবা দিচ্ছে। এসব সেবা নিতে আসা সাধারণ শ্রমিকদের কাছ থেকে তারা সার্ভিস ফি হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে।
অপরদিকে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দুবাই কনস্যুলেট থেকে ১৪ দিরহাম দিয়ে ডকুমেন্ট এটেস্টেশন করাতে পারতেন। কিন্তু ‘ফশওয়া গ্লোবাল’ সরকারি এই ফি বাদেও সার্ভিস ফ্রি হিসেবে অতিরিক্ত ৩০ দিরহাম এবং এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ সার্ভিসের জন্য আরও পাঁচ দিরহাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ প্রবাসীদের।
অর্থাৎ সরকারি ফি ১৪ দিরহাম বা ৪৬০ টাকার ডকুমেন্ট এটেস্টেশনের জন্য ৩৫ দিরহাম বা ১ হাজার ১৪০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে নথি সত্যায়নের জন্য প্রথম দিন সেগুলো মালয়েশিয়ান ওই কোম্পানিতে জমা দিতে হয়, যা নিতে হয় তিন কর্মদিবস পর।
এমআরপি পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা শারজাহের বাসিন্দা সুমন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আগে সরকারি ফি দিয়ে সার্ভিস নিয়েছি। আসতে সময় লাগত ১৫ থেকে ২০ মিনিট। কিন্তু এখন অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে এবং সার্ভিস সেন্টারে আসতে অনেক সময়ও ব্যয় হচ্ছে।”
বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি ‘টাইপিং’ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নোমান আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশে কনস্যুলেট অফিসে আগে ১৪ দিরহাম দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ডকুমেন্ট এটেস্টেশন করে নিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে ডকুমেন্ট এটেস্টেশন করতে সরকারি ফি এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ৩৫ দিরহাম গুণতে হচ্ছে।
“এ ছাড়া দুই থেকে তিন দিন পর আবার এসে ডকুমেন্ট নিতে হচ্ছে। দুই দিন আসা-যাওয়ায় গাড়ি ভাড়া বাবদও অতিরিক্ত অর্থ আর সময় ব্যয় হচ্ছে।”
শাহ আলম নামে এক প্রবাসী বলেন, “আগে কনস্যুলেটে সেবা নিতে এসে অনেক টাকা গাড়ি ভাড়া গুণতে হয়েছে। যে সার্ভিস কনস্যুলেটে নেই, সেটার জন্য আবার এখন আউটসোর্সিং সার্ভিস সেন্টারে যেতে আলাদা করে গাড়ি ভাড়া গুণতে হচ্ছে, সময়ও লাগছে।
“প্রবাসীদের সার্ভিস দিতে যদি সমস্যা হয়, প্রয়োজনে কনস্যুলেটের পাশে বড় একটা জায়গায় বাংলাদেশি টাইপিং সেন্টার চালু করা হলে প্রবাসীরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এতে করে সাধারণ প্রবাসীদের টাকা ও সময় কম লাগত।”
“দীর্ঘদিন প্রবাসীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাচ্ছন্দ্য, নির্বিঘ্নে এবং আরামদায়কভাবে সেবা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ (আউটসোর্সিং সার্ভিস) নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সার্ভিস ফি এর বিষয়টি আমরা আবার পর্যালোচনা করব।”
“আমাদের যথেষ্ট লোকবল আছে, আর এসব সার্ভিস কনসুল্যেটেই দেওয়া সম্ভব। আর যদি আউটসোর্সিং সার্ভিস দিয়ে সেবা দিতে হয়, তাহলে আমাদের এত লোকবল রাখার কোনো দরকার নেই। আমরা দূতাবাসে প্রবাসীদের সকল সার্ভিস প্রদান করছি।”