দেশে গিয়ে অ/পহরণের এক ভ/য়াবহ অভিজ্ঞতা প্রকাশ করলেন আমিরাতের ব্যবসায়ী
নিজ দেশে ছোট ছুটিতে গিয়ে সময় অপহরণের শিকার উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন ব্যবসায়ী তার অভিজ্ঞতা নিয়ে মুখ খুলেছেন। ভিপি শামির নামের এই ব্যবসায়ী ৩৯ ঘণ্টার অগ্নিপরীক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন। তার মতে, তাকে মারধর করা হয়েছিল, শ্বাসরোধ করা হয়েছিল, খাবার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল এবং অর্থের জন্য অপমান করা হয়েছিল।
ইন্ডিয়া থেকে ফোনে তিনি খালিজ টাইমসকে বলেন, ‘বন্দী অবস্থায় থাকাকালীন আমি আমার মেয়ে এবং স্ত্রীর কথা ভেবেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমি আর কখনো তাদের দেখতে পাব না। আমি তাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। আমার মনে শুধু এটাই ছিল। যারা আমাকে ধরে রেখেছিল, তাদের কোনো দয়া ছিল না এবং তারা টাকার জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত ছিল। আমার প্রিয়জন এবং আমার কর্মীদের প্রার্থনাই আমাকে ফিরিয়ে এনেছিল।’
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফার্মেসির একটি চেইন পরিচালনাকারী শামিরের মতে, ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার সময় তিনি দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যে নিজ শহরে একটি ছোট ছুটি কাটাতে ফিরে এসেছিলেন। তিনি দাবি করেন, অপহরণকারীরা তার ব্যবসায়িক অংশীদারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছিল এবং তার স্ত্রীকে পুলিশে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দিয়েছিল।
শামির জানান, মামলাটি আল বারশায় অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁর সঙ্গে জড়িত বিরোধের জের ধরে শুরু হয়েছিল।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি আদালত আমার পক্ষে রায় দিয়েছিল এবং আমাকে ৬ লাখ ৭৫ হাজার দিরহাম ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। তবে মামলার সঙ্গে জড়িতরা কিছুদিন ধরে আমাকে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল। এই বছরের শুরুতে বকেয়া পাওনা নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমরা তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি তার এক অসন্তুষ্ট প্রাক্তন কর্মচারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন, যাকে ২০২২ সালে অসদাচরণের জন্য আমিরাত থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
‘তারপর তারা আরও কয়েকজন প্রাক্তন কর্মচারীকে জড়িয়ে এবং আমার সম্পর্কে বিষাক্ত তথ্য ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। এটি এমন কিছু ছিল, যা আমরা জানতাম কিন্তু আমরা আশা করিনি যে, তারা এটিকে এভাবে বাড়িয়ে তুলবে এবং আসলে আমাকে অপহরণ করবে।’
বাড়ির কাছে অপহৃত
শামির জানান, তিনি তার মোটরসাইকেলটি তার বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে চালাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই একটি সাদা এসইউভি কার সামনে এসে তার পথ আটকে দেয়। একদল লোক গাড়ি থেকে নেমে তাকে গাড়িতে উঠতে বলে। তার পেছনে আরেকটি গাড়ি পার্ক করা হয়েছিল, যাতে তিনি পালিয়ে যেতে না পারেন। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৫২ মিনিটে এটি ঘটে।
তিনি বলেন, একজন লোক আমাকে আঘাত করে এবং আমি পড়ে যাই। তারপর তারা আমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। গাড়ি থেকে বেশ কয়েকজন লোক আমাকে আঘাত করে। একজন ব্যক্তি আমার গলায় একটি শার্ট দিয়ে পেছন থেকে চেপে ধরে। আমি তাদের প্রতি কোনোভাবে প্রতিক্রিয়া জানালে লোকটি শার্টটি শক্ত করে ধরে আমাকে শ্বাসরোধ করে ফেলবে। তারা দাবি করেছিল, আমি যেন তাদের মুক্তিপণ হিসেবে মোট ১.৫ মিলিয়ন দিরহাম দেই এবং রেস্তোরাঁ মামলায় অভিযুক্তদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করি।
তার মতে, লোকগুলো তাদের ফোন বন্ধ করে শত শত কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে গেল। সাইনবোর্ডের ঝলক এবং বাসগুলোর দিকে তাকিয়ে আমি বুঝতে পারলাম, তারা আমাকে কেরালার দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে।
শামির বলেন, বুধবার সকাল ৯টায় দু’জন লোক তাদের ফোন চালু করে এবং বুঝতে পারে, অপহরণের খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তারা আতঙ্কিত হতে শুরু করে এবং তারপর বিষয়টি প্রচারিত হওয়ার জন্য আমাকে আরও মারধর করে। তারপর তারা আমার সঙ্গী এবং আমার স্ত্রীকে ফোন করে মামলা প্রত্যাহার করতে বলে।
উদ্ধার অভিযান
অপহরণকারীরা তার সঙ্গে দুইবার গাড়ি পরিবর্তন করেছিল এবং একবার একটি বাড়িতে থামে। তারা শামিরের সাথে আলোচনা চালিয়ে যায়। তিনি বলেন, যখন তিনি তাদের বলেছিলেন যে, তিনি পুরো টাকা দিতে পারবেন না, তখন তারা দুইবার তাদের দাবি কমিয়ে এনেছিল – অবশেষে ৮০০০০০ দিরহামে নেমে আসে। প্রথমে তারা চেকের পাতা চেয়েছিল এবং তারপর তাদের মন পরিবর্তন করে বলেছিল, তারা নগদ টাকা চায়। যখন আমি বললাম, এত টাকা আনতে আমাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফিরে যেতে হবে, তখন তারা ধৈর্য হারাতে শুরু করে।
তিনি বলেন, অপহরণকারীরা আমাকে বলেছিল, রাজ্যের সীমান্ত অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গেই তারা আমাকে মেরে ফেলবে। উভয় রাজ্যের পুলিশের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং তারপর আমার জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করতে অনেক সময় লাগত। তাই সীমান্তের কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি আশা হারাতে শুরু করেছিলাম।
শামীরের মতে, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার পর কেরালা পুলিশ তাকে নাটকীয়ভাবে কোল্লাম থেকে উদ্ধার করে – যেখান থেকে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল সেখান থেকে ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে। পুলিশ নিশ্চিত ছিল না, আমি দুটি গাড়ির মধ্যে কোনটিতে ছিলাম। তাই দ্রুতগতিতে ধাওয়া করার পর তারা গাড়ির সামনের দিকে থামে। তারপর তারা লোকদের গ্রেপ্তার করে এবং আমাকে উদ্ধার করে। যদি তারা আধ ঘণ্টাও দেরি করত, তাহলে আমরা সীমান্ত পেরিয়ে তামিলনাড়ু রাজ্যে চলে যেতাম, যেখানে নিয়ে তারা আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ ৩৯ ঘণ্টার মতো মনে হয়েছিল।
তাকে উদ্ধারের জন্য কেরালা পুলিশের তীব্র প্রচেষ্টার কৃতিত্ব তিনি দেন। তিনি বলেন, পুলিশ সারা রাত আমার বাড়িতে কাটিয়ে আমার পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার জন্য আমার রেকর্ডগুলো পরীক্ষা করেছে। তারপর তারা আমার অপহরণকারীদের গতিবিধি সনাক্ত করতে এবং তাদের খুঁজে বের করার জন্য তিনটি দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমি তাদের প্রচেষ্টার জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।