বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় পতন হয়েছে। এক সপ্তাহেই প্রতি আউন্স সোনার দাম প্রায় ৫০ ডলার কমেছে। বিশ্ববাজারে এমন দাম কমলেও আগামী সোমবারের (১৩ নভেম্বর) আগে দেশের বাজার সোনার দাম কমার সম্ভাবনা কম। বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এবং স্থানীয় বাজারে পাকা সোনার দাম কমলে সোমবার দেশের বাজারে দামি এই ধাতুটির দাম কমানোর ঘোষণা আসতে পারে।

দেশের বাজারে সোনার দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে সোনার দাম বাড়ানো বা কমানোর ঘোষণা দেয়। আগামী সোমবার বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করেছে কমিটি।

বাজুস সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে সোনার দাম পুনর্নির্ধারণের পর এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম প্রায় ৫০ ডলার কমেছে। বিশ্ববাজারে সোনার এমন দাম কমলেও দেশের বাজারে তার খুব একটা প্রভাব পড়েনি। অপরদিকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম হু হু করে বেড়েছে। এসব কিছু পর্যালোচনা করে দেশের বাজারে সোনার দাম পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববাজারে সোনার লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল এক হাজার ৯৯২ ডলার। সপ্তাহ শেষে তা কমে এক হাজার ৯৩৮ ডলারে চলে এসেছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে সোনার দাম কমেছে ৫৪ ডলার বা ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেই দাম কমেছে ২০ দশমিক ১০ ডলার বা এক দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

এই দাম কমার আগে বিশ্ববাজারে সোনার দাম দফায় দফায় বাড়তে দেখা যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশের বাজারে দুই দফা সোনার দাম বাড়ানো হয়। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বর্তমানে দেশের বাজারে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে সোনা।

সর্বশেষে গত ৬ নভেম্বর দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়। সে সময় সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৪ হাজার ৬২৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৬৯১ টাকা বাড়িয়ে ৯৯ হাজার ৯০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫ হাজার ৬১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ১৬৬ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৭১ হাজার ৩২৫ টাকা। বর্তমানে দেশের বাজারে এই দামেই বিক্রি হচ্ছে সোনা।

অবশ্য সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের এর থেকে বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে সোনার গহনা বিক্রি করা হয়। একই সঙ্গে ভরিপ্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৩৫৬ টাকা।

দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর পর বিশ্ববাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারে সোনার দাম কমানো হবে কি না- জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ বলেন, ‘দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর পর এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৫০ ডলারের মতো কমেছে। তবে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। আবার গত সপ্তাহে ডলারের দাম অনেক বেড়েছে। প্রতি ডলার ১২৫ টাকা হয়েছে। এরপরও আমারা সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দেখবো।’

তিনি বলেন, ‘আগামী সোমবার বৈঠকের পরিকল্পনা করেছি। এর আগে স্থানীয় বাজারের চিত্রও পর্যালোচনা করবো। বিশ্ববাজার, স্থানীয় বাজারে পাকা সোনার দাম এবং ডলারের দাম- সবকিছু পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবো।’