বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের টিকিট কেটে যথাসময়ে গন্তব্য পৌঁছানো নিয়ে যাত্রীরা থাকেন উদ্বিগ্ন। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর কোন না কোন কারণে ঢাকা অথবা বাইরের দেশগুলো থেকে ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্ব হয়। এ যেন অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে! এবার সৌদি আরবের মদিনায় যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পর ব্যাটারি জটিলতায় উড়োজাহাজটির টেকনিক্যাল সমস্যা ধরা পড়ে। এর জের ধরেই একে একে ৪টি গন্তব্যে চলাচলকারী উড়োজাহাজ শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে।

সর্বশেষ ওমানের মাস্কাট রুটে দু’টি শিডিউল ফ্লাইটের একটি গত রোববার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ১০ ঘণ্টা বিলম্বে আজ সোমবার ভোরে মাস্কাটের উদ্দেশ্য ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। শুধু মাস্কাট রুট নয়, মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশ দুবাই ও কুয়েত রুটের ফ্লাইটও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢাকা ছেড়ে যেতে পারেনি। এতে ওই সব ফ্লাইটের যাত্রীদের ঢাকা এবং গন্তব্য দেশের বিমানবন্দরগুলোতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। ভোগান্তির পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত যাত্রীদের থাকার হোটেল ভাড়া ও খাওয়ার খরচের টাকাও।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও টার্মিনাল সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট (বিজি-৩৩৭) বিকেল ৫টায় মদিনার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। ওই ফ্লাইটটি পরদিন অর্থাৎ ১০ নভেম্বর সকাল ৯টায় ঢাকায় ফেরার কথা। কিন্তু ফ্লাইটটি সেখানে পৌঁছার পর এয়ারক্রাফটের ব্যাটারি কাজ করছিল না। প্রকৌশলীরা মেরামত করতে না পারায় পরদিন অর্থাৎ ১১ নভেম্বরের ঢাকা থেকে মদিনাগামী (বিজি-৩৭৭) বিমানের অপর একটি শিডিউল ফ্লাইটে নতুন ব্যাটারির পাশাপাশি প্রকৌশলীদের পাঠানো হয়। ওই ফ্লাইটটি সার্ভিসেবল করার পর গতকাল সকাল ৮টায় (বাংলাদেশ সময়) মদিনা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসে। সেটি বেলা আড়াইটায় ঢাকায় পৌঁছে বলে বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মদিনা ফ্লাইটের শিডিউল উলট-পালট হওয়ার কারণে ওমানের মাস্কাট, দুবাই ও কুয়েতগামী তিনটি ফ্লাইটও শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে। গত শনিবার বিকেল ৫টায় দুবাইয়ের উদ্দেশে যে ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সেটি গতকাল রোববার বেলা ২টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। অপর দিকে কুয়েতের ফ্লাইটটি গত শনিবার রাত ৭টায় ছাড়ার পরিবর্তে সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিলম্বে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায়। একইভাবে ১০ নভেম্বর ওমানের মাস্কাটগামী (বিজি-৭২২) ফ্লাইটটি রাত ৮টার পরিবর্তে ১১ নভেম্বর দুপুর ১২টায় ছেড়ে যায়। আবার গতকাল রোববার রাত ৮টায় মাস্কাটের উদ্দেশ্য যে ফ্লাইট ছাড়ার কথা ছিল সেটি আজ সোমবার ভোর ৬টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে। গতকাল বিমানের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, এসব উড়োজাহাজ যথাসময়ে উড্ডয়ন করতে না পারার কারণে প্রায় দুই হাজার যাত্রী ঢাকা ও বিদেশের এয়ারপোর্টে হয়রানির শিকার হয়েছেন। একইভাবে বিমান কর্তৃপক্ষ হোটেল ও খাওয়া খরচ মিলিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিমের মোবাইলে কল করলে তিনি রিসিভ না করে কেটে দেন। গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা নাম না জানিয়ে শিডিউল বিপর্যয় প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে শিডিউল বিপর্যয় নয়, কয়েকটি ফ্লাইট বিলম্বে ছেড়ে গেছে আবার বিলম্বে ঢাকায় ফিরেছে। যাত্রীদের সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার এবং থাকার জন্য হোটেল দেয়া হয়েছে। যাত্রীদের কোনো সমস্যা হয়নি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ২১টি অত্যাধুনিক মডেলের উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বোয়িং ৭৭৭, ৬টি ড্রিমলাইনার ৭৮৭, ৬টি বোয়িং-৭৩৭ (২টি লিজ) এবং কানাডার বোম্বাডিয়ার কোম্পানির ড্যাশ-৮ রয়েছে ৫টি। জানা যায়, বিমানের বহরে দীর্ঘদিন ধরে ড্রিমলাইনার (এসটুএজেএস ৭৮৭-৮০০) এয়ারক্রাফট টেকনিক্যাল থাকার পর গত ১১ নভেম্বর এটিকে সার্ভিসেবল করা হয়। কিন্তু সেটি সচল করা হলেও অপর ড্রিমলাইনার এসটুএজেটি-৭৮৭-৮০০) আবার টেকনিক্যাল ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া কানাডার বোম্বাডিয়ার কোম্পানির (ড্যাশ-৮ এসটুএজেডব্লিউ) একটি এয়ারক্রাফট দীর্ঘ দিন ধরে বিমানের হ্যাংগারে পড়ে রয়েছে। অপর দিকে প্রায় তিন মাস আগে বিমানের বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর এসটুএফও) ডি চেকের জন্য ইতালির রোমে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই এয়ারক্রাফটটি কবে নাগাদ বিমানের বহরে যোগ হবে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কারো কাছ থেকে সঠিকভাবে জানা যায়নি।