আরব আমিরাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার কঠিন পরিস্থিতির মুখে

একশ্রেণীর লোকের অপরাধ কর্মকাণ্ডে ভিজিট ও বিজনেস পার্টনার ভিসাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের জন্য আরব আমিরাতের ভিসানীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এতে দেশটিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

দেশটির ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট টাইপিং সেন্টার ও ট্রাভেলস থেকে জানা গেছে, আমিরাতে ভিজিট ভিসায় আসা আগের মতো সহজ নয়। বরং আগের চেয়ে ভিজিট ভিসার ফি দ্বিগুণ করা হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভিসা রিজেক্ট আসে। তাছাড়া যারা ভিজিট ভিসায় আমিরাতে আসবেন তাদেরকে এয়ারপোর্টে ৩ হাজার দিরহাম বা সমপরিমাণ ডলার এবং আসা-যাওয়ার টিকেট সাথে রাখতে হবে। ভিজিট ভিসায় এসে দেশটিতে কোথায় থাকবেন সেখানকার অথবা কার কাছে অবস্থান করবেন সে ব্যক্তির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এয়ারপোর্টে দেখাতে হবে। তবেই তিনি দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন। আবার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত পাঠানো হয় বলেও জানা যায়।

অপরদিকে আগে যে কোনো ধরনের লাইসেন্সে পার্টনার ভিসা ২/৩ জনকে দেয়া হতো। সেটা কমিয়ে এখন ১ জনে নিয়ে আসা হয়েছে। স্কিলড ভিসার ক্ষেত্রেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে কঠিন শর্ত। গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট ছাড়া কোন বাংলাদেশিকে ভিসা দেয়া হচ্ছে না।
বন্ধুপ্রতিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমিরাত কেন বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানে কাঠোর হয়েছে তার কারণ হিসেবে প্রবাসীরা জানান, একশ্রেণীর বাংলাদেশি ভিজিট ভিসায় এসে মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে না গিয়ে অবৈধ হয়ে থাকা, পার্টনার ভিসা লাগিয়ে ব্যবসা না করে অন্য জায়গায় কাজ করে পার্টনার ভিসার সম্মান নষ্ট করা, নিয়োগ ভিসা প্রাপ্তিতে সনদ জালিয়াতি, ভুয়া সনদে বিএসসি ইন্জিনিয়ার হয়ে দেশটিতে এসে চুল কাটার কাজ করা, প্রতারণা করা, রাস্তার পাশে শাকসবজির দোকান খুলে বসা, মাছ-মুরগি, পান-সুপারি, সিগারেট, পুরাতন কাপড়-চোপড়, ঝালমুড়ি, সেদ্ধ ডিম, ফলফলাদি, ডাস্টবিন থেকে অ্যালুমিনিয়ামের ডিব্বা ও ছেঁড়াফাটা কার্টন কুড়িয়ে বিক্রি করা, রাস্তায় বা মার্কেটে লুঙ্গি পড়ে নিজ দেশের মতো চলাফেরা করাসহ নানা রকম কাজ করে থাকে।

এদের মধ্যে আবার একশ্রেণীর লোক রয়েছে যারা চাকরির ডিউটি শেষে নিয়োগ দাতা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের অজান্তে সামান্য বাড়তি আয়ের জন্য এসব করে থাকে। যা সুন্দর ও শান্তি প্রিয় দেশটির আইনে মারাত্মক অপরাধ। এসব বিষয়গুলো দেশটির প্রশাসনের নজরে আসে। অনেক সময় প্রশাসনিক লোকেরা ঝটিকা অভিযান চালাতে গেলে রাস্তার পাশে বসা দোকানিরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। প্রশাসনিক লোকেরা চলে গেলে পুনরায় এসে পসরা সাজিয়ে বসে। এতে অনেককে ধরে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিরূপ মন্তব্য করতে শোনা যায়। এসব দেখে তখন অন্য দেশের লোকদের তিরস্কার অর্থে হাসতে দেখা যায়। তবে তারাও যে এসব করে না তাও কিন্তু নয়। বরং চোখে পড়ার মতো কাজটিই করে থাকে বাংলাদেশিরা। ফলে অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসানীতিতে কঠোর হয় আমিরাত।

অথচ এ ব্যাপারে আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর এবং দুবাই ও উত্তর আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন প্রবাসীদের আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে কাজ করতে প্রবাসীদের প্রতি বার বার তাগিদ দিয়ে আসছেন।

কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কোথায় দেশ, কোথায় দেশের ভাবমূর্তি। আর কেনইবা বাংলাদেশিদের প্রতি এতো কঠোর হলো আমিরাত সে চিন্তা-ভাবনাও যেন নেই ওইসব লোকদের।
কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে বলেন, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে এ দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।

প্রবাসীরা বলেন, এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশটিতে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হবেন ব্যাপক বাংলাদেশি। অন্যদিকে দেশীয় শ্রমিক সংকটে বিপাকে পড়বেন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন জীবন নিয়ে উক্তি