দুবাই থেকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সংঘবদ্ধ চক্র যেভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা
ভুয়া ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির পরিচয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজের অফার দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। দুবাই থেকে পরিচালিত এই চক্রটি পড়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছে অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি। এই চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
খিলগাঁও থানার একটি মামলার সূত্র ধরে বুধবার চক্রটির এক সদস্য মো. আব্দুল আল মাসুমকে (৩০) চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা, ১৭টি চেক বই ও একটি ফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আসামি আরও জানিয়েছে, প্রতারণার কাজটি দুবাই থেকে পরিচালিত হচ্ছে। ভুক্তভোগী এই ব্যক্তি চক্রটির খপ্পরে পড়ে ৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা খুইয়েছেন।
সংঘবদ্ধ চক্রটির সদস্যরা প্রথমে ভিকটিমকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন ভুয়া ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির পরিচয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজের অফার দেয়। পরে বিভিন্ন উপায়ে টাকা উপার্জনের মিথ্যা কৌশল সম্পর্কে ব্রিফিং দিয়ে ভিকটিমকে তাদের সঙ্গে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। ভুক্তভোগী ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে। প্রতারকরা টেলিগ্রাম গ্রুপে ভিকটিমকে কিছু টাস্ক দেয়, এগুলো সম্পন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিম তার বিকাশ একাউন্টে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পেয়ে যায়। এভাবে প্রথমে লোভ দেখিয়ে পরবর্তী সময়ে দুবাই থেকে প্রতারণার ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। এই চক্রের একজনকে গ্রেফতারের পর এমনই তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
তারা শুরুতে বিভিন্ন সাইট সাবস্ক্রাইব করতে বলে। যেখানে প্রতি সাবস্ক্রিপশনে ১০০ টাকা করে ভুক্তভোগীর বিকাশ একাউন্টে জমা হতে থাকে। ভুক্তভোগীর পেছনে এভাবে প্রতারক চক্রটি ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে। ভিকটিম বিকাশে এত সহজে কাজ করে টাকা পাওয়ায় কৌতুহলী হয়ে ওঠে এবং প্রতারক চক্রের সদস্যদের বিশ্বাস করতে শুরু করে।
পরবর্তী সময়ে প্রতারক চক্রের ‘ডাবল বেনিফিট টাস্ক প্ল্যান’, ‘হোমওয়ার্ক প্ল্যান’, ‘ক্যাশব্যাক প্ল্যানের’ মতো ভুয়া প্ল্যানে ভিকটিম কনভিন্সড হয়ে সরল বিশ্বাসে টাকা ইনভেস্ট করতে থাকেন বলেও জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান। তিনি বলেন, এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভিকটিমকে ভিআইপি নামক টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে। সেখানে প্রথমে ওভারটাইম টাস্ক অর্ডার, দ্বিতীয় ওভারটাইম র্যান্ডমলি টাস্ক অর্ডার নামে ভুয়া টাস্ক সম্পন্ন করায় এবং ভিকটিমের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী যখন তার লভ্যাংশসহ টাকা ক্যাশআউট করতে চায়, তখন তারা সিস্টেমের সমস্যা, সার্ভার ডাউনের কথা বলে টালবাহানা করতে থাকে এবং পরবর্তী টাস্কগুলো সম্পন্ন করার পরামর্শ দেয়।
প্রতারক চক্রটি ভিকটিমের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ৭ লাখ ১৯ হাজার টকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে তিনি খিলগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার তদন্ত করছে বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।