টিকিট ছাড়া ট্রেন যাতায়াতের ১ যুগ পর টাকা পরিশোধ করলেন বেলাল

প্রায় ১২ বছর বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা থেকে বগুড়া শহরে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন বেলাল উদ্দিন (৬৪) নামের এক ব্যক্তি। এক যুগের এই ট্রেনে যাতায়াতের অধিকাংশ সময় টিকিট ছাড়াই চলাচল করেছেন তিনি। জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসে তিনি ঐ এক যুগে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণের কারণে অনুশোচনায় ভুগছেন। যে কারণে সমস্ত হিসেব নিকেশ করে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার সাজু’র কাছে গিয়ে ৭ হাজার টাকা করেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তিনি স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানিয়ে তার বকেয়া টাকা জমা করেন। পরে বিষয়টি স্টেশন মাস্টার সাংবাদিকদের জানান।

বেলাল উদ্দিন বলেন, তার বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা। তিনি ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সোনাতলা থেকে বগুড়ায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।  তিনি বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করেছেন। সপ্তাহে বা মাসে দুই একবার যাতায়াত করতে হয়েছে। এছাড়া আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বগুড়ায় হওয়ায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল বগুড়ায়।  ওই সময়গুলোতে বিনা টিকিটে যাতায়াত করেছি। ওই সময় এটাকে আমরা স্বাভাবিক হিসেবেই মনে করতাম। কিন্তু এখন এসে এই জিনিসটা আমাকে পীড়া দিচ্ছিলো।

তিনি বলেন, একজন মুমিন বান্দার উচিত হবে, নিজের হক, বিবি বাচ্চার হক, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনের হক এবং দেশের আপামর জনগণের হক আদায় করতে হবে। এই হক আদায় করতে গিয়ে আমি বিবেকের কাছে দংশিত হই। এরপর আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিই আমার জীবনের সেই হক আদায় করা দরকার। পরে আমি আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনি আমাকে পরামর্শ দেন আপনি ওই টাকা টিকিটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন, যাতে সরকারের কোষাগারে যায়। পরে আজকে এসে টাকা সব হিসেব করে ৭ হাজার টাকা জমা দিলাম। মূলত আখিরাতের ভয় থেকেই আমি এই টাকাটা পরিশোধ করেছি। কারণ মৃত্যুর পর অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। টাকা জমা দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।

৭ হাজার টাকার বেশিও তো হতে পারে বা কম আপনি ৭ হাজার টাকাই কেন দিলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২ বছরে যদি সপ্তাহে আমার ২ বার যাতায়াত করতে হয়েছে এমনটা যদি ধরি সেক্ষেত্রে ৫২ সপ্তাহকে ১২ দিয়ে গুন করে আবার সেটাকে ২ দিয়ে গুন করার পর যেটা আসছে সেটাকে ট্রেনের টিকিট মূল্য ৫ টাকা দিয়ে গুন করলে ৬ হাজার ২ টাকার একটু বেশি হয়। কিন্তু আমি ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি।

এ বিষয়ে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, বিষয়টি অনেক ভালো লাগার। তার জমা দেওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। ট্রেন আমাদের জাতীয় সম্পদ। অনেকেই বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন।