সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাইয়ের ঝলমল নগরী থেকে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়েছেন ফেনির বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশী। নিখোঁজের ৩ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও অদ্যাবধি তার কোনো হদিস মিলেনি। কেনো, কী কারণে মোহামদ আলী নিখোঁজ রয়েছেন, সে ব্যাপারে পরিবার, তার বন্ধুসহ কেউই কোনো ধারণা দিতে পারছেন না।

এ দিকে দেশে থাকা মোহাম্মদ আলীর পরিবারে চলছে কান্নার রোল। লেগে আছে অভাব অনটন। বন্ধ হয়ে গেছে সন্তানদের পড়ালেখা। অজানা আতঙ্কে সময় কাটানো এই পরিবারের সদস্যরা এখন দুই দেশের সরকারের কাছে একটাই দাবি জানাচ্ছেন।

আর সেটি হচ্ছে, নিখোঁজ মোহাম্মদ আলীকে যেনো দ্রুত উদ্ধার করে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে দুবাই এর শারজাহ থেকে হাসান নামের একজন প্রবাসী টেলিফোনে ৩ মাস ধরে মোহাম্মদ আলী নিখোঁজ থাকার সংবাদ জানিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, আরব আমিরাতের শারজাহ আলখান এলাকার ১০ নং হাউজ থেকে নিখোঁজ হন মোহাম্মদ আলী (৪৫)।

অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে দেশে থাকা তার পরিবার পরিজনরা চরম উদ্বিগ্ন। ঘটনার পর নিখোঁজের বিষয়টি উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলীর বন্ধু কাজী আহসান দুবাই প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি জানান, অদ্যাবধি তার কোনো খোঁজ খবর বের করতে পারেনি দুবাই প্রশাসন।

নিখোঁজ মোহাম্মদ আলীর গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার দাগন ভূঁইয়া থানার বারাহি গোবিন্দ গ্রামে। তার পিতার নাম মুছা মিয়া। তার পাসপোর্ট নম্বর (ইজ ০৯৪০৩০৮)। স্ত্রী জারিফা খাতুন রুমকি।

৪ সন্তানের জনক মোহাম্মদ আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পরিবারে নেমে আসে স্তব্ধতা। অভাব অনটন লেগেই আছে। পরিবারের সদস্যরা যাকে কাছে পাচ্ছেন তাকেই ঘটনাটি বলছেন। কিন্তু সান্ত্বনা ছাড়া কেউ তাদেরকে কোনো সুসংবাদ দিতে পারছেন না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।

গতকাল শনিবার বিকেলে মোহাম্মদ আলীর বড় মেয়ে ইসরাত জাহান (১৬) নয়া দিগন্তকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, আমার আব্বুর সাথে আমাদের সর্বশেষ কথা হয়েছিল গত ১০ জুন দুপুরের দিকে। এর পর থেকেই আব্বুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি (ইমোসহ) আমরা বন্ধ পাচ্ছি। ১৪ জুন নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাই আব্বুর সাথে থাকা এক বাংলাদেশীর কাছ থেকে।

আব্বু শারজাহ আলখান ১০ নম্বরের একটি (কোম্পানি/বাসা বাড়িতে) রান্নার কাজ করতেন। মাঝে মধ্যে গাড়িও চালাতেন। তিনি বলেন, প্রায় ১৬-১৭ বছর ধরে আব্বু দুবাই আছেন। কারো সাথে আব্বুর কোনো শত্রুতা আছে এমনটি আমরা কখনো শুনিনি। আব্বুও আমাদেরকে বলেননি। এর পরই ইসরাত কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আব্বুর পাঠানো টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলতো। এখন টাকার অভাবে চাল-ডাল কিনতে পারছি না।

আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। চিকিৎসা বন্ধ। সরকারের কাছে একটাই দাবি করছি, আব্বুকে উদ্ধার করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। এর আগে মোহাম্মদ আলীর মা আয়েশা খাতুন ছেলেকে ফিরে পেতে কান্না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ছেলেকে ওরা কি জন্য নিয়ে গেলো ? এখন আমার নাতি পুতিরা অনেক কষ্টে আছে। ওরে তোমরা উদ্ধার করে এনে দাও।