সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে। শিগগিরই দেশটির মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবাসী আয় পাঠানোর মাশুল ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করবে। পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথম আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর মাশুল বাড়তে যাচ্ছে। গালফ নিউজের সংবাদে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর খরচ বৈশ্বিক গড় মানের কাছাকাছি নিয়ে আসতে এই মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরব আমিরাত এখন বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসেই এসেছে প্রায় ২৯১ কোটি ডলার, যা একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি।

গালফ নিউজের খবরে বলা হয়েছে, সরাসরি মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থেকে অর্থ পাঠানোর খরচ বাড়লেও ডিজিটাল লেনদেনে ব্যয় বাড়ছে না। এ পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা বিশেষ করে শ্রমিকরা ডিজিটাল লেনদেনে ঝুঁকে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত অনুসারে, লেনদেনপ্রতি মাশুল বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ দশমিক ৫ দিরহাম। তবে এই মাশুল বৃদ্ধি শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠানের শাখাগুলোয় প্রযোজ্য হবে। আরব আমিরাতের ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড রেমিট্যান্স গ্রুপ (এফইআরজি)-ভুক্ত সব মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান এই মাশুল বৃদ্ধির বিষয়ে রাজি হয়েছে।

জয়ালুকাস এক্সচেঞ্জের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্টনি জস গালফ নিউজকে বলেছেন, সংগঠনের সব সদস্য প্রতিষ্ঠান মাশুল বৃদ্ধিতে রাজি হয়েছে। সম্ভবত আগামী মে মাস থেকে এই মাশুল বৃদ্ধি কার্যকর হবে। দেশটির ভোক্তা সুরক্ষা আইন অনুসারে, মাশুল বৃদ্ধির অন্তত দুই মাস আগে গ্রাহকদের জানানোর নিয়ম।

বর্তমান কাঠামো অনুসারে, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ভারত ও ফিলিপাইনে প্রবাসী আয় পাঠানোর খরচ প্রতি লেনদেনে ২২ দিরহাম, আর যুক্তরাজ্যে পাঠানোর ক্ষেত্রে মাশুল ৫০ দিরহাম। এর বাইরে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। পাকিস্তানে রেমিট্যান্স পাঠানোর মাশুল ভারতের সমপরিমাণ হলেও প্রেরকদের কার্যত মাশুল দিতে হয় না, কারণ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ স্টেট অব পাকিস্তান মাশুল পুনর্ভরণ করে।

লুলু ফাইন্যান্সিয়াল হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিব আহমেদ বলেন, জেনে রাখা দরকার, ১৫ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধির পরও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর খরচ রেমিট্যান্স হিসাবে পাঠানো অর্থের ৩ দশমিক ৫ শতাংশের কম। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য স্থান থেকে প্রবাসী পাঠানোর গড় খরচ ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ আরব আমিরাত প্রবাসী আয় পাঠানোর খরচ প্রতিযোগিতামূলক রাখার যে অঙ্গীকার করেছে, এটি তারই প্রতিফলন।

আরব আমিরাতের মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয় থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর খরচ বাড়লেও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও অ্যাপের মাধ্যমে পাঠানোর খরচ বা মাশুল বাড়ছে না। তবে এখনো বেশির ভাগ মানুষ সরাসরি মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয় থেকে অর্থ পাঠান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে এখনো খুব একটা মানুষ অর্থ পাঠান না।

মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত শ্রমিকদের কারখানা ও বসবাসের স্থানের আশপাশে অবস্থিত। অর্থাৎ এই সেবা তাদের কাছাকাছি হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রমিকরা দেশে প্রবাসী আয় পাঠান। সুতরাং প্রবাসী আয় পাঠানোর খরচ বাড়লে তাদের খরচ বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা মনে করছেন, লেনদেনের মাশুল বাড়লে এই মানুষরা যখন বিপাককে পড়বেন, তখন হয়তো তারা কম খরচে অর্থ পাঠানোর বিকল্প পথ খুঁজবেন।

খাত-সংশ্লিষ্ট মানুষরা মনে করছেন, কভিড মহামারীর সময় মানুষ যেমন ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনে ঝুঁকে পড়েছিলেন, মাশুল বৃদ্ধির কারণে আবারও তা হতে পারে। অর্থাৎ বিপুলসংখ্যক মানুষ ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রবাসীর আয় পাঠানোর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। ওই সময় অনলাইন, অ্যাপ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে; অনেকে এখনো সেই ধারা বজায় রেখেছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকেই। প্রবাসী আয়ে ইউএইর পরে রয়েছে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালি।

২০২১-২২ অর্থবছরে ইউএই থেকে প্রায় ২০৭ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩০৩ কোটি ডলারে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসেই এসেছে প্রায় ২৯১ কোটি ডলার। আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর মাশুল বাড়লে দেশের প্রবাসী আয়ের প্রবাহে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।