সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের আওতাধীন দুবাই কনস্যুলেট অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন আদনান আসিফ নামে এক পাকিস্তানি নাগরিক। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেবা নিতে গেলে পাকিস্তানিদের সঙ্গে উর্দুতে কথা বলতে হচ্ছে তাদের।

এ কারণে ছোটখাটো তথ্য পেতেও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। দ্রুত সেবা পেতে বাধ্য হয়েই নিজের দেশের কনস্যুলেট অফিসে উর্দুতে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন প্রবাসীরা। বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন দুবাইয়ে বসবাসরত সচেতন বাংলাদেশিরা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কনস্যুলেট অফিস সরাসরি কাউকে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। মূলত একটি এজেন্সির কাছ থেকে এ সার্ভিস নেওয়া হয়। তারাই কনস্যুলেট অফিসে নিরাপত্তা কর্মী সরবরাহ করে।

কনস্যুলেট অফিসে কথা হয় বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে। তাদের মধ্যে ১০ বছর ধরে আরব আমিরাতের ফজিরায় থাকেন হবিগঞ্জ জেলার আনোয়ার হোসেন। ই-পাসপোর্টে নামের বানান সংশোধনের জন্য সকাল থেকে কনস্যুলেট অফিসে বসে ছিলেন।

দুপুরের দিকে আদনানের কাছ থেকে জানতে পারলেন সংশোধন করতে হলে ৬০ দিরহাম খরচ করতে হবে। চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার গণেশ সরকার ১৭ বছর ধরে দুবাই থাকেন। তিনিও এসেছেন সংশোধনের জন্য। ১০ দিরহাম বকশিশ দিয়ে কাগজ জমা দিয়ে অপেক্ষা করছেন।

চট্টগ্রামের ছেলে শাখাওয়াত ১২ বছর ধরে থাকেন আমিরাতের রাসুলকিমায়। পাসপোর্ট নবায়ন করতে এসে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদনানের সঙ্গে উর্দু অথবা হিন্দিতে কথা বলতে হয়। এই দায়িত্বে বাংলাদেশি থাকলে ভালো হতো।’

কনস্যুলেটের অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা আমীনুর রশীদ জানান, আগে দায়িত্ব পালন করতেন এক নাইজেরিয়ান।

নিরাপত্তার দায়িত্ব বাংলাদেশি কাউকে না দিয়ে পাকিস্তানি নাগরিককে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা নিয়োগ দিয়েছেন বুঝেশুনেই দিয়েছেন। এখানে ১০ বাংলাদেশিকে দাঁড় করিয়ে দিলেও তাদের কথা কেউ শুনবে না। ভিনদেশিকে দায়িত্ব দেওয়ার কারণে কিছুটা হলেও তার কথা শুনে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দুবাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনস্যুল জেনারেল বি এম জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। আরব আমিরাতে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ লাখের মতো বেকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

অথচ কনস্যুলেটের নিরাপত্তার দায়িত্ব পেয়েছেন একজন পাকিস্তানি। এটা কীভাবে সম্ভব—এমন প্রশ্ন করা হলে অনেকটা চমকে ওঠেন কনস্যুল জেনারেল। পরে অবশ্য তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘নিরাপত্তা কর্মীর বিষয়টি আসলে সরাসরি কনস্যুল অফিস দেখে না। একটি কোম্পানি সরবরাহ করে। তারা কোন দেশের নাগরিককে দায়িত্ব দেয়, তা জানার প্রয়োজন হয় না।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শাহরিয়ার কবির কালবেলাকে বলেন, ‘কনস্যুলেট অফিসের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় নিরাপত্তার বিষয় যেমন রয়েছে,

তেমনি রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার ব্যাপারও রয়েছে। বিদেশের মাটিতে যেখানে হাজার হাজার বাংলাদেশি বেকার রয়েছে, সেখানে যারা এ পাকিস্তানিকে নিয়োগ দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’