ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই নিয়ে চার যুবককে লিবিয়ায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্র তাদের নিয়ে যায় দুবাই। এরপর বিক্রি করে দেওয়া হয় দুবাইয়ের দালাল চক্রের কাছে। একাধিক দালাল চক্রের হাত বদল হয়ে অবৈধভাবে মিশর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়।

গত ২৫ মার্চ তাদের বন্দী করে মুক্তিপণ দাবি করছে চক্রটি। এর মধ্যে বুধবার ইফতারের সময়ে বন্দীদশা থেকে পালিয়ে গেছে একজন।

ভুক্তভোগী চারজন হলেন-চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাচা মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. ওয়াসিম (২২), মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন (১৯), আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম (১৯) ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন (২০)। এর মধ্যে মো. ওয়াসিম পালিয়ে গেছে। পরে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গেছে।

স্বজনরা জানান, গত দুইমাস আগে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ার হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশে চারজন জনপ্রতি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা করে ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা জহিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়।

জহিরুল ইসলাম তাদের প্রথমে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার মিজানুর নামে এক লোকের হাতে তাদের তুলে দেন।

মিজানুর রহমান তিনদিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। সাতদিন পর দুবাই থেকে মিশর হয়ে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে আরেক দালালের হাতে বিক্রি করে দেয় তাদের। লিবিয়ায় তাদের কিছুদিন কাজ দেওয়ার পর গত ২৫ মার্চ বন্দী করে রাখা হয়। পরের দিন ২৬ মার্চ পরিবার ও স্বজনদের কাছে কয়েকটি নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও অডিও বার্তা পাঠায় দালাল চক্রটি।

নাঈমুল ইসলামের বড় ভাইয়ের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন জানান, ভিডিও বার্তায় জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হবে চার জিম্মিকে। এজন্য সময়ও বেধে দেওয়া হয়।

টাকা না দিলে একজন-একজন করে লাশ পাঠাবে বলে জানান অপহরণকারীরা। বুধবার টাকা না পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারো ফোন দেওয়া শুরু করে। টাকা পাঠাতে পারব না, তাদের ফোন ধরে কী করবো-বলেন স্বজনরা।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, জহিরুল ইসলাম ইতালি ছিলেন। সেখান থেকে এক নারীকে বিয়ে করে কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। এরপর আবার লিবিয়া চলে যান। গ্রামের বাড়িতে সেভাবে তিনি আসেন না।

প্রথমবারের মতো নিজ এলাকা থেকে কাউকে চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে জহিরুল ইসলাম দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও যুবকদের চাকরির প্রলোভনে বিদেশে পাচার করেছে।

যে ব্যক্তি নিজ এলাকার চার যুবককে দুবাই নিয়ে বিক্রি করে দিতে পারে, সে অন্য এলাকায় এটা সহজে করবে এটাই স্বাভাবিক। চার যুবককে বন্দী করে মুক্তিপণ দাবির খবর পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে মূল দালাল চক্রের হোতা জহিরুল ইসলামের পরিবার। তার দ্বিতীয় স্ত্রী কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক এলাকায় ভাড়া বাসায় ছিল, সেখান থেকেও পালিয়ে গেছে বলে জানান এলাকাবাসী।